March 15, 2025, 4:50 am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর চন্ডিপুর মহল্লার বাসিন্দা হোসেন আলী নামের এক ব্যবসায়ী কারাবন্দী থাকা অবস্থায় তার তিনটি ব্যাংক হিসাব থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে ৩৭ লাখ টাকা। এমনকি যে সব চেকে টাকাগুলো তোলা হয়, সেগুলোর ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয় পুলিশের কাছে জব্দ থাকা মুঠোফোন থেকে।
তিনি অভিযোগ করেন, সে কারাগারে বন্দি অবস্থানরত ছিলেন, তখন তাঁর তিনটি ব্যাংক হিসাব থেকে মোট ৩৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে তিনি নিজেই মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগ মোতাবেক, তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ কর্তৃক জব্দ থাকা তাঁর মোবাইল ফোন থেকে ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ তে হোসেন আলী নিজে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাহমুদ হাসান শিশির, কর্মচারী মাহমুদ হাসান লিমন ও তন্ময় হোসেনের পাশাপাশি বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম ও উপ-পরিদর্শক আব্দুল আওয়ালকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কারাগারে অবস্থানরত সময় তিনি কোনভাবেই টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেননি, বরং তাঁর অনুমতি ছাড়াই, জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের ষড়যন্ত্র রচিত হয়েছে।
অভিযোগে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ৯ লাখ টাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর ১১ লাখ টাকা, ২২ সেপ্টেম্বর ৯ লাখ টাকা এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এতে মোট ৩৩ লাখ টাকার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ তোলা হয়েছে, যেখানে তাঁর হিসাবে ছিল ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৪৭৪ টাকা।
তদুপরি, আইএফআইসি ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ৩ লাখ টাকা এবং ইউএসবি ব্যাংকের পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর শাখা থেকে ১ অক্টোবর ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ কথা বলা হয়।
সব মিলিয়ে তিনটি ব্যাংকের হিসাব থেকে মোট ৩৭ লাখ ১৫ হাজার টাকার উত্তোলনের ঘটনা সামনে এসেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের সময় তাঁর গাড়িতে থাকা ব্যাগে ব্যাংকের চেকসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিল। তবে, চেকগুলোর তালিকায় সঠিক উল্লেখ না থাকায় এবং মোবাইল ফোন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ায় জাল স্বাক্ষরের ব্যবহার হয়ে থাকে।
হোসেন আলী দাবি করেন, তিনি যখন কারাগারে ছিলেন তখন তাঁর মোবাইল ফোনও জব্দ অবস্থায় ছিল; তাই কোনভাবেই তিনি নিজে টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেননি। বরং, তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিশির ও কর্মচারী লিমন ও তন্ময় তাঁদের নিজস্ব ইচ্ছা ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে এই অনধিকৃত লেনদেন সম্পন্ন করেছেন।
ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. খালেকুজ্জামান জানান যে, ব্যাংকে চেকের স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই করে টাকা প্রদান করা হয়েছে এবং অভিযোগ উত্থাপিত হলে ব্যাপারটি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা হবে।
একইভাবে, আইএফআইসি ও ইউএসবি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকগণও জানান যে, ফোনে হোসেন আলীর সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের মতে স্বাক্ষর তাঁরই মনে হয়েছে। তবে, অভিযোগ প্রাপ্তির পর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিষয়টি বিস্তৃতভাবে যাচাই করে দেখার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, চেক উত্তোলনের কাজ কোনো পৃথক বাহিনী দ্বারা সম্পন্ন করা হয়েছিল এবং প্রাপ্ত কাগজপত্র পর্যালোচনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে হোসেন আলী অভিযোগ করেন, কারাগারে অবস্থানরত অবস্থায় মোবাইল ফোন জব্দ থাকার কারণে তাঁর কোনো অনুমোদন ছাড়াই টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও জানান, এই ষড়যন্ত্রের ফলে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা, হুমকি ও নির্যাতনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে তাঁর আর্থিক অবস্থা ধ্বংস হয়ে পড়েছে এবং এমনকি তাঁর সন্তানের বিদ্যালয়ে যাওয়াতেও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি, রাজপাড়া থানায় তাঁর পিতাও একটি জিডিও করে অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
বর্তমানে মামলাটি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) তদন্তাধীন রয়েছে।
পাশাপাশি, হোসেন আলী বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়ে বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেছেন।
তদন্ত ও আদালতের কার্যক্রম সম্পন্ন হলে বিষয়টির প্রকৃত সততা ও জটিলতা স্পষ্টভাবে উদঘাটিত হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
© All rights reserved © 2020 alokitobhorerbarta.com