January 16, 2025, 3:13 am
ব্যুরো রাজশাহীঃ রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে দিন-রাত তিন ফসলি জমি পুকুর খনন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষ কে জিম্মি করে জোরপূর্বক জমি নিয়ে অবৈধ পুকুর খনন করছে।
এমন অভিযোগ তুলে আজ দুপুরে রাজশাহী সদরের একটি পত্রিকা অফিসে ভূক্তভোগিরা সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন। অপরদিকে ২৬ ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ওই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কিন্তু আইন অমান্য করে শিলমাড়িয়ার ইউপির সড়গাছির বিলে প্রায় একশত বিঘা জমিতে বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের পাইপ উঠিয়ে ভেকু হান্নান নামের আওয়ামীলীগ কর্মী এস্কেভেটর (ভেকুর) দিয়ে পুকুর খনন করছে বলে জানাগেছে।
ভেকু দিয়ে মাটি খননকারী এই হান্নান বিগত আ.লীগের আমলে নেতাকর্মীদের পুকুর খনন করে দিয়ে ছিল। এখন বিএনপি নেতা এবং নেতাদের কাছের মানুষদের পুকুর খনন করে দেওয়ার চুক্তি করছে। উপজেলাবাসীরা অবাক হয়ে বলছেন, অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের সময়ে কিভাবে অবৈধ পুকুর খনন করা সম্ভব? অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের নিকট কোনো ব্যক্তি অভিযোগ দিলে এস্কেভেটরের (ভেকুর) ব্যাটারি খুলে আনতে দেখা যায়। পরবর্তি সময়ে দুই/একদিনের ভেতর আবার মোটা অংকের টাকার সমঝোতা করে ব্যাটারিসহ সকল টুল-বক্স দিয়ে দেওয়া হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত জমির আকার পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কোনোরকম কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। থানা পুলিশ বলছে পুকুর খনন বন্ধ করার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, আমারা রাতে গিয়ে পুকুর খনন বন্ধ করতে পারবো না!
সরোজমিনে পরিদর্শন করে অভিযুক্ত পুকুর খননকারীদের ভাম্যমান না দিয়ে রাতের আধারে ভূমিদূর্স্যদের সাথে সমঝোতা করছে এমটায় বলছে স্থানীয় পুকুর খননকারী আওয়ামীলীগ নেতা হান্নান। শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের আলি হোসেন বলেন, আগে আ.লীগের নেতারা পুকুর খননের ব্যাপারগুলি নিয়ন্ত্রণ করত। এখন তা খোলস পুকুর খনন করছে। পুকুর মালিকরা বর্তমানে এই খোলস পাল্টানো দালালদের নিকট জিম্মি। স্থানীয়রা বলছে, শুধুমাত্র অনেক টাকা লেনদেনের কারণে পুকুর খননের কার্যক্রম কোনো ভাবেই থামছে না। তাই উপজেলা জুড়ে তিন ফসলি জমিতেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। আবুল কাশেম আলি নামক ব্যক্তি বলেন, দেশের মানুষ কি শুধু শুধু মাছ খেয়ে জীবনধারণ করবে। সকল ফসলেরও প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা পুকুর খনন করে তারা সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে গিলে এলাকায় থাকা যাবে না। উপজেলা প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়ে সাধারণ মানুষেরা প্রতিকার পাচ্ছেন না। টাকা এবং ক্ষমতার জোরে সবকিছু করা হচ্ছে। অপদিকে ধীরে ধীরে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এদিকে আজ মুঙ্গলবার রাজশাহী সদরে সাংবাদিক সম্মেলনে করেছে ভুক্তভোগীরা। শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের আবুল কালাম বলেন, যেভাবে পুকুর খনন চলছে, এক সময় এই ইউনিয়নে কোনো ফসলি জমি থাকবে না। তারপরেও যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে শিলমাড়িয়া ইউপির বেশিরভাগ জমি পুকুর খনন করা হয়ে গিয়েছে। অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের সময় বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল পুঠিয়ায় পুকুর খনন। এদিকে উপজেলার ২০টি স্থানে পুকুর খনন করার জন্য খননকারী দালালরা, নেতা এবং প্রশাসনের নিকটে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যাচ্ছে। আর মাটি বহন করতে গিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানকৃত গ্রামীণ সড়কগুলো চোখের সামনে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, কৃষি জমিকে পুকুরে রূপান্তরিত করার জন্য আমাদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা একটি কমিটি আছে । সেখানে প্রথমে আবেদন জমা দিতে হয়। তারপরে আমরা সে জমি পরিদর্শন করে পুকুর খনন করা যাবে কিনা না আমরা পরিদর্শন শেষে জানিয়ে দেবার নিয়ম থাকলেও কোন সময় কেউ আমাদের কাছে পুকুর সংক্রান্ত বিষয়ে আসে না। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সবগুলো পুকুর খনন অবৈধ। এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কিন্তু তারা রাতের-আধারে পুকুর খননের কাজ করছে। গভীর রাতে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে পারবো না! ১৪৪ ধারা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের নয়, এটি
থানা পুলিশের দায়িত্ব।
© All rights reserved © 2020 alokitobhorerbarta.com