December 6, 2024, 2:20 am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় বন বিভাগের ‘ভুল’ টেন্ডারে রাস্তার গাছ কেটে সাবাড় করেছেন ঠিকাদার। টেন্ডারে দেয়া কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে অন্যত্র। এ ঘটনায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনাস্থলে জেলা বন কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাবে উপজেলা সাবেক বন কর্মকর্তা ‘ভুল’ স্বীকার করেন। এরপর সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
সরেজমিনে উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউপির ছয়গ্রাম থেকে তিলাহারী হয়ে কেশরহাট যাতায়াতের রাস্তার দু-ধারের মাঝারী বনজ গাছ কেটে সাবাড় করছেন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে থাকা টেন্ডারের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, উপজেলার ধুরইল ইউপির “খানপুর নেয়াবজানের বাড়ির উত্তর সীমানা হতে খানপুর সুইসগেট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বাঁধ বাগান (অংশ)” মোট পাঁচ লটে টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার ঠিকানা বদলে অন্য এই রাস্তাটির গাছ কেটে সাবাড় করছেন। বিষয়টি বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে কয়েকজন প্রতিনিধি পাঠান।
প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের জানান, টেন্ডারের ঠিকানা ‘ভুল’ হয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমসিম খেয়ে যান তারা। উত্তরে বেশ গড়মিলও পাওয়া যায়। পরবর্তিতে পর্যবেক্ষণে বন বিভাগের টেন্ডারে এতো বড় ‘ভুল’ ধরা পরে।
উপজেলা সাবেক বন কর্মকর্তা জনাব আলী সাংবাদিকদের কাছে ‘ভুল’ স্বীকার করে বলেন, রাস্তার ধারের আম গাছে মুকুল না আসায় তারা বনজ গাছ কেটে ফেলার জন্য ৫ লটে টেন্ডার আহবান করেন। টেন্ডারে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাই। তবে ‘ভুল’ করে ভিন্ন জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছে। তিনি গত কার্য দিবসে অবসরে গেছেন বলেও জানান। এসময় তার সাথে সায় দেন ঘটনাস্থলের উপস্থিত থাকা জেলা সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মেহেদিজ্জামান, উপজেলা বন কর্মকর্তা নুরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টরা।
বন বিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি আম গাছ রক্ষায় অন্তত ১০ টি মাঝারি বনজ গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। অথচ প্রাচীন এই রাস্তাটিকে টেকাতে বারবার সংস্কার করা হলেও বন্যা পরবর্তী সময়ে রাস্তাটি ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে যায়। বন্যাকালে রাস্তাটির দু-পাশের বিলে পানিতে থয়থয় করে। অবশেষে বনজ ও ফলজ গাছ লাগিয়ে রাস্তাটি পুনরায় সংস্কার করা হয় এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লেগে রাস্তাটি পিস ঢালাই অর্থাৎ পাকাকরণ করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তাটি টেকা মাত্রই বনবিভাগের এমন সিদ্ধান্ত রীতিমত অবাক করেছে স্থানীয়দের।
জানা গেছে, টেন্ডারে কাটা গাছ বিক্রি করে তার একটি অংশ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির মাঝে বিতরন করা হয়। বাকি টাকা বনবিভাগে জমা করা হয়। কেবল যারা গাছ গুলোকে দেখভাল করেন তারাই এই টাকার অংশ পান। মাঝারি এই গাছ গুলো কেটে ইট ভাটায় দিচ্ছেন ঠিকাদার।
এদিকে, বন বিভাগের টেন্ডারের কাগজপত্র ঘেটে পাওয়া তথ্য বলছে, গাছ কাটা হবে ধুরইল ইউপি এলাকার ৩ কিলোমিটার রাস্তার বনজ গাছ। কিন্তু গাছ কাটা হচ্ছে ঘাসিগ্রাম ইউপি এলাকায়। অর্থাৎ টেন্ডার হয়েছে এক জায়গায় আর কাজ হচ্ছে আরেক জায়গায়। দু-ঘটনাস্থলের ফারাক (দূরত্ব) রয়েছে প্রায় কয়েক কিলিমিটার। এছাড়াও কাজ বাস্তবায়নে জানানো হয়নি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাউকে। এত বড় টেন্ডার অথচ অবগত নন খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
প্রতিবেদককে ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না! ঘাসিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম বাবলু তিনিও অবগত নন। তবে কেন বন বিভাগের এতো বড় টেন্ডার জানেন না কেউ? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে কাগজে দেখায় এক আর বাস্তবায়ন করে আরেক। বিনিময়ে তাদের মাসহারায় মাসগুল। সবকিছু সাবাড়ে নেমেছে তারা। সরকার যেখানে চারা রোপণে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে বন কর্মকর্তাদের এহেন কান্ডে হতবাক হতে হয়, বৈকি!
এ বিষয়ে সামাজিক বন বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ্ বলেন, এটা একটা মিস আন্ডারিস্ট্যাংডিং হয়েছে। পরবর্তীতে সেটা সংশোধন করা হয়েছে। একারণে আমি আমার সেকেন্ড ম্যানকে পাঠিয়েছিলাম। পরে ৮ লক্ষ ২৩ হাজার ৭৫০ টাকার ৫ লটের টেন্ডারের কাগজপত্র সংশোধন করা হয়েছে। তবে আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
© All rights reserved © 2020 alokitobhorerbarta.com